Latest

Continue reading this blog to discover yourself

Wednesday, July 13, 2022

Eclipse Ek Ojanay | Short Stories

 ইক্লিপ্স এক অজানায়

খালিদ বিন মাসুদ

(এই গল্পটি খুলনা কালচারাল সেন্টার এর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।)

eclipse ek ojanay
ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টিতে পীচ ঢালা পথে হাঁটতে ভালোই লাগে।  সেই সাথে শীতল হাওয়া যেন প্রতিবারেই মন কেড়ে নিচ্ছে।  জনমানবশূন্য রাস্তায় একা হাঁটতে কিছুটা ভীতি কাজ করলেও বিহারীর মনটা বেশ ফুরফুরে।  কেননা আজ নতুন একটা টিউশনির কথা আছে।  বেকার আর বিজ্ঞানীদের মধ্যে মিল এখানেই।  বিজ্ঞানীদের মন ফুরফুরে হয় কিছু আবিষ্কারের গন্ধে, এদিকে বেকারদের মন ফুরফুরে হয় টিউশনির গন্ধে!  রাস্তায় চলতে চলতে এক পর্যায়ে এসে বিহারী দাঁড়িয়ে পড়লো।  চট করে পকেট থেকে এক টুকরো কাগজ বের করে দেখলো – নাহ, ঠিকানা তো ঠিকই আছে।  ঠিকানায় গলি ছিলো বামে, কিন্তু এখানে তো গলি ডানে।  বামপাশে বিল ছাড়া কিছুই নেই।  পরমুহুর্তেই বিহারী ভাবলো হয়তো সে রাস্তার বিপরীত দিক থেকে ঢুকেছে।  তো আর কি করা, ডানে মোড় নিয়েই চলতে শুরু করলো বিহারী।  

গলিতে ঢুকেই বিহারী লক্ষ্য করলো তাপমাত্রা কেমন যেন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।  আকাশের এক প্রান্ত থেকে সুরু আলোর রেখা এসে খেলা করছে প্রকৃতির সাথে।  গলির কুকুরটা হটাত চঞ্চল হয়ে উঠেছে।  বিহারী মনেমনে ভাবছে – হায় ঈশ্বর! কোথায় এসে পড়লাম? এমন সময় সামনে টিমটিমে আলোর নীচেয় কাঠের দরজা দেখা গেলো।  বিহারী দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল।  

রাত প্রায় ১১ টা।  এতো রাতে কারো বাসায় নক করতে একটু দ্বিধা করলেও মাইনের কথা চিন্তা করে নক করেই বসলো বিহারী।  দরজা নক করতেই অপাশ দিয়ে ভেসে এলো এক শীতল কণ্ঠস্বর – কে? বিহারী – আমি বিহারী, বিহারী ভদ্র।  আবার শীতল কণ্ঠে – কে বঙ্ক বিহারী? বিহারী – জি, বিহারী ভদ্র।  দরজা খুলেই এক তরুণী বলল – স্যার, আসুন।  আমি তো আপনার অপেক্ষায়ই ছিলাম।  বিহারী – শিওর বলে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো।  

বেলা করে ঘুম থেকে উঠা বিহারীর জন্যে নতুন কিছু নয়।  কিন্তু আজ চোখ যেন মেলতেই চাইছে না।  চোখের পাতা এক করতেই বারবার গতরাতের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।  যে কিনা দর্শনের ছাত্র, সে কিনা পড়িয়েছে পদার্থ! ভাবতেই হৃদস্পন্দন নতুন মাত্রায় কম্পিত হচ্ছে।  আসলে পড়াতে বসেই বিহারী বুঝেছিলো সে ভুল যায়গায় এসেছে।  তবু মেয়েটির শীতল কণ্ঠ, উদাস চাহনি, বারান্দা দিয়ে বয়ে যাওয়া মৃদু বাতাসের সাথে এক পশলা বৃষ্টি।  এর সবই যেন বিহারীকে বলছিলো আর কিছুটা সময় পার করাতে।  মেয়েটিও বিষয়টা বুঝেছিলো।  তারপরও দর্শনের যুক্তিতে পদার্থ বিজ্ঞান বোঝানো মেয়েটি বেশ উপভোগ করেছিলো।  এটা অবশ্য বিহারীর নিজস্ব অভিমত।  

দিনের প্রায় পুরাটা সময় প্রায় আনমনেই কাটল বিহারীর।  কেননা বিবেক বলছে এভাবে চলে আসা বিহারীর ঠিক হয়নি।  মেয়েটিকে অন্ত্যত সত্যটা বলে আসা উচিৎ! আর এই বিষয় নিয়েই সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে বিহারী।  

আজকের রাতটা কিন্তু ভরা পূর্ণিমা।  বিহারী হেটে চলেছে।  সে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছে মেয়েটিকে সত্য বলবে।  যদিও এতে কারো কিছু এসেযায় না, তারপরও নিজের মনের তৃপ্তি।  রাস্তায় চলতে চলতে এবারো বিহারী থমকে দাঁড়ালো।  আর এবার রীতিমত বিস্মিত হলো! বিহারী আপনমনে বলল - আরে গলি তো বামে! ডানে তো বিল ছাড়া কিছুই নেই।! হটাত মনে হলো এবার হয়তো আমি রাস্তার সঠিক দিক দিয়েই এসেছি তাই গলি বায়ে পড়েছে।  আসলে এই রাস্তাটা বিশাল বিশাল গাছে মোড়া।  লাইট পোষ্ট একটাই, তাও আবার গলিতে ঢুকতে।  লাইটপোস্টের আলোটা টিম টিম করছে।  এই অঞ্চলটাই কেমন জানি অন্ধকারের আলোছায়া খেলা হয় সারাক্ষণ।  বিহারী এগিয়ে চলল।  

পড়ার টেবিলে বসে চায়ে চুমুক দিতে দিতে বহু হিসাব কষে চলেছে বিহারী।  কে এই মেয়ে? গতরাতের সেই বিজ্ঞানের ছাত্রীটি কোথায়? নামও পরিবর্তন।  এমনও কি হয়?  গতরাতে মেয়েটির নাম বলেছিলো মুনিয়া অথচ আজ বলছে বুশরা! তাছাড়া বুশরা দর্শনেরই ছাত্রী।  তাহলে? শুধু তাইনা, বুশরার নালিশ গতরাতে আসার কথা বলেও আমি আসি নি! নাহ, আর সহ্য হচ্ছে না।  যন্ত্রণায় মাথা চেপে বেরিয়ে পড়লো বিহারী।  

কয়েকমাস ধরে বিহারীর দেখা পাচ্ছে না কাছের বন্ধু জোহান।  ছেলেটা হটাত করেই উবে গেলো? জোহান অনেক চেষ্টার পর আজ জানতে পেরেছে তার ঠিকানা।  বিহারী নাকি এখন বাইপাস রোডের ৩নং বাইলেনের ওই পোড়ো বাড়িতে থাকে।  

দুটো নক পড়তেই ক্যাচ ক্যাচ শব্দে হালকা খুলল দরজাটি।  ভিতরে প্রবেশ করেই তো জোহানের মাথা ঘুরে যাবার জোগাড়।  বিহারী এখানে রীতিমত গবেষণাগার বসিয়ে রেখেছে! গবেষণার বিষয় হচ্ছে – সূর্য গ্রহণ।  ঘরে ছড়ানো ছিটানো পৃষ্ঠা পড়ে আছে।  ওখান থেকেই একটা তুলে জোহান পড়লো – সূর্য গ্রহণের সময় ছটামণ্ডলের উদ্ভব হয়।  একই ঘটনা প্যারালাল ইউনিভার্সে ঘটলে উভয়ের মধ্যে এমডেড হয়।  এ সময় কেউ যদি ঐ অঞ্চল দিয়ে যায় তবে সে প্যারালাল ইউনিভার্সে পৌছাতে পারবে।  জোহান লেখাগুলির কোনো মর্ম উদ্ধার করতে না পারায় অসহায়ের মত তাকিয়ে রইলো বিহারীর দিকে।  বিহারী এতক্ষণ বইয়ে ডুবে ছিলো।  জোহানকে দেখে সে বেশ খুশি হলো।  বলল – আজ রাতে আমার সাথে যাবি।  তোকে সৃষ্টির এক বিস্ময় দেখাবো।  জোহান মাথা হেলে সম্মতি দিলো।  ভাবছিলো আরো কথা হবে কিন্তু বিহারী আবার বইয়ের পাতায় মনোনিবেশ করলো।  

বিহারী আর জোহান নির্জন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে।  জোহান সিগারেট ধরাতে গেলে বিহারী বাধা দিল।  বলল – অতি প্রাকৃত ঘটনার সম্মুখীন হতে চলেছি আমরা, জানিনা কি হয়! ওসব থাক এখন।  জোহান পকেটে হাত ঢুকিয়ে গুনগুন করে গান গেয়ে হাঁটতে থাকলো বিহারীর সাথে। 

অনেকটা সময় লাইটপোস্টের নীচেয় অপেক্ষা করতে হচ্ছে দেখে জোহান অধৈর্য হয়ে উঠল।  এমন সময় বিহারী চাপা কণ্ঠে বলল – ইটস টাইম।  জোহান লক্ষ্য করলো চারপাশের তাপমাত্রা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে।  আকাশ থেকে সরু আলো এসে নৃত্য শুরু করেছে।  বিহারী আস্তে আস্তে জোহানকে বলল – দোস্ত আমি যাচ্ছি।  যদি ২০ মিনিটের মধ্যে না আসি একটা ব্যবস্থা করিস।  এদিকে বাম পাশের গলিটা অদৃশ্য হয়ে ডান পাশ থেকে এক গলির উদ্ভব হয়েছে।  জোহান কিছুই না বুঝে লাইটপোস্ট এর নিচে অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে রইলো।  বিহারী এগিয়ে চলল গলির দিকে।  হঠাট তীব্র গতিতে এক হিংস্র কুকুর এসে আক্রমণ করে বসলো জহানকে।  জোহান পিলারের সাথে আঘাত খেয়ে চেতনা হারালো।  

ধড়ফড় করে লাফিয়ে উঠে জোহান দেখে রাত ১২ টার বেশি হয়ে গেছে।  ডানে কোনো গলি নেই অথচ বায়ের গলিটা দৃশ্যমান! এদিকে বিহারীরও কোনো খবর নেই।  জোহানের হাতে কুকুর কামড়িয়েছে, রক্ত ঝরছে।  জোহান কাদার মধ্যে থেকে কোনমতে উঠে খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে ছুটতে শুরু করলো বিহারীর সেই পোড়ো বাড়ির দিকে, আর কাপা কাপা কণ্ঠে বলছে – বিহারীকে ফিরিয়ে আনতেই হবে।

এরকম আরো সায়েন্স ফিকশন গল্প পড়তে Science Fiction লিংকে ক্লিক করুন।


No comments:

Post a Comment