Latest

Continue reading this blog to discover yourself

Wednesday, July 13, 2022

Ocena Ami | Short Stories

অচেনা আমি

মোঃ খালিদ বিন মাসুদ

(এই গল্পটি খুলনা কালচারাল সেন্টার এর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।)

Ocena Ami
দরজায় নক পড়তেই হন্তদন্ত হয়ে মা ছুটে এলেন।  দরজা মেলেই এক গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো নিলয়ের প্রান্তের দিকে।  মনের চাওয়া-পাওয়া, আনন্দ-বেদনা যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে চাহনীর গভীরতায়।  কিছু বলতে যেতেই প্রান্ত বলে উঠল – “মা, সরো! আমার কাজ আছে।” কথাটা বলেই প্রান্ত ঘরের ভেতর চলে গেলো। 

রাতে খাবার টেবিলে মায়ের চোখে পানি দেখে ঐশী আর সহ্য করতে পারলো না।  ঐশী – “মা, ও-মা, আমি তোমার মেয়ে না? তুমি শুধু প্রান্ত প্রান্ত করো।  ” মা চোখের পানি মুছতে মুছতে বলল – “মা-রে, তোর বাবা যাওয়ার সময় বলেছিল – দে আর মাই স্পেশাল চাইল্ড, আই হ্যাভ লট অব ওয়ার্ক অন ম্যানকাইন্ড, টেক কেয়ার অব দেম। ” ঐশী রেগে গিয়ে বলল – “তারপর, তারপর তো সে কোনোদিন আমাদের খবর নেয় নি! সে বেঁচে আছে না মারা গেছে কিছুই জানি না। ” মা কিছু না বলে টেবিল থেকে উঠে গেলো। 

মেঘের প্রচন্ড গর্জনে ঐশীর চোখ মেলে গেলো।  জানালা দিয়ে অবলীলায় তাকিয়ে রইলো বাইরে।  সে যেন বৃষ্টির অপেক্ষা করছিলো।  অনেকটা সময় পাড়ি দিতে সে লক্ষ করলো কেবল বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে আর গর্জন হচ্ছে, অন্য কিছু নয়।  হুট করেই তার মনে পড়লো ছাদে মায়ের কাপড় ছিলো।  ছাদে গিয়েই ঐশীর চোখ স্থির হয়ে গেলো।  দেখে প্রান্ত লোহার রেলিঙয়ের উপর সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পড়ে আছে, তার জামা কাপড় ছেড়াফাটা।  ঐশী এক চিৎকার দিয়ে প্রান্তকে ধরতেই মা ছুটে এলো।  

ভোরের আলো ফুটেছে পূবের আকাশে।  মা এখনো পানি ঢেলে চলেছে প্রান্তের মাথায়।  ঐশী অসহ্য হয়ে বলল – “মা সত্যি বলো, কি হচ্ছে এসব? এতদিন প্রান্ত কোথায় ছিলো? আমি কেনো অপ্রয়োজনীয় স্মৃতি ভুলে যাই?” বরাবরের মতো মায়ের মুখে কোনো কথা নেই।  ঐশী নিজেই সিদ্ধান্ত নিলো যে, আমিই যাবো বাবা যেখানে কাজ কোরতো।  

এক মাস ও একটি লোমহর্ষক মিশন পর।  খাবার টেবিলে মা ও মেয়ে মুখোমুখি।  মা তাচ্ছিলের হাসি হেসে জানতে চাইলো ঐশীর চোখে পানি কেনো? ঐশী – “মা! তুমি সব জানতে!” মায়ের মুখে কোনো উত্তর নেই।  ঐশী – “বাবা কেনো কোরলো প্রান্তের উপর এমন এক্সপেরিমেন্ট? আমি জানি তুমি কিছুই বলবে না।  তুমি ওই শয়তান লোকটার পক্ষে। ” মা – “এক শয়তান আছে বলেই তো আমরা হাজার শয়তান থেকে নিরাপদ!” ঐশী কিছু না বুঝেই কাঁদতে কাঁদতে বলল – “প্রান্ত আমার ভাই, আমি ওকে বাঁচাবোই। ”

প্রান্ত ও ঐশী একটি ওয়ার্কশপের চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে দাড়িয়ে আছে।  প্রান্ত – “কেনো করছিস এসব?” ঐশী – “আমি চাই তুই নিজেকে জান। ” বলেই ঐশী সুইচ অন করে দিলো।  প্রান্ত – “আজ যাই হোক, শুধু মনে রাখিস বাবা এসবের জন্য দায়ী নয়।  তুই প্রস্তুত হ অচেনাকে চিনতে। ” ঐশী কঠোর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রান্তের দিকে।  চৌম্বক ক্ষেত্র অ্যাক্টিভ হতেই ঐশী ছিটকে গিয়ে লেগে গেলো লোহার দেয়ালে।  শত চেষ্টা সত্ত্বেও নিজেকে ছাড়াতে পারলো না লোহার দেয়াল থেকে।  বেশ কিছু সময় পর প্রান্ত হাটতে হাটতে ঐশীর পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বলল – “তুই মানুষ না, তুই রোবট। ” ঐশী লোহার দেয়ালে লেগে থাকা অবস্থায় তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।  প্রান্ত ধীরে ধীরে সুইচের দিকে এগিয়ে গেলো।  সুইচে হাত দিয়ে প্রান্ত বলল – “তোর চোখের পানি কোনো কষ্ট থেকে আসে নি।  এটা প্রোগ্রাম করা।  প্রতি বছরে তোকে রিপ্রোগ্রাম করা হয়।  ” ঐশী নির্বাক।  প্রান্ত আবার বলতে শুরু করলো – “আমি শুধু এই দিনের অপেক্ষায় ছিলাম।  আমরা আমাদের বাবাকে খুঁজে বার করবোই। ” কথা শেষ হতে না হতেই প্রান্তের শরীর দিয়ে বিদ্যুতের ঝলকানি বেরিয়ে এলো।  বিদ্যুতের প্রচন্ডতায় সমস্ত ওয়ার্কশপ জলে পুড়ে ছারখার হয়ে গেলো।

এরকম আরো সায়েন্স ফিকশন গল্প পড়তে Science Fiction লিংকে ক্লিক করুন।


No comments:

Post a Comment