Latest

Continue reading this blog to discover yourself

Wednesday, July 13, 2022

Zombie The Beginning | Short Stories

জম্বি দ্য বিগিনিং

খালিদ বিন মাসুদ

(এই গল্পটি খুলনা কালচারাল সেন্টার এর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।)

Zombie The Beginning

গরম কফিতে চুমুক দিয়ে বেশ কিছু সময় চোখ বুজে রইলো ইনজাম।  এসিসটেন্ট নাজিফার ঠোটে মুচকি হাসির দেখা মিলল।  নাজিফা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ভাবল কফিটা ভালোই হয়েছে।  একে একে তিন চুমুক দিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে তাকালো ইনজাম।  ইনজামের অফিসের ফ্রন্ট ভিউটা দারুণ।  সুউচ্চ টাওয়ারের টপ ফ্লোরে বিশাল থাই এর অপর প্রান্ত থেকে পড়ন্ত বিকেলের সূর্য ডোবা, এক অসাধারণ দৃশ্য! ইনজাম এই সময়টায় তার অফিসের সব লাইট অফ করে দেয় যাতে সূর্যের লাল আভায় তার অফিস মোহাচ্ছন্ন হয়ে ওঠে।  যদিও বুদ্ধিটা তার ফ্রেন্ড গ্রাফিক্স ডিজাইনার কিংকরের কাছ থেকে ধার করা, তারপরও ইনজাম দারুণ উপভোগ করে বিষয়টি।  নাজিফা ভাবলেশহীন কন্ঠে একটু কেশে বলল – স্যার আমি যাবো? ইনজাম তাকে অনুমতি দিয়ে আবার কফিতে চুমুক দিয়ে প্রকৃতির দিকে নিবিড় চাহনিতে তাকিয়ে রইলো।  

সন্ধ্যা হয়ে গেছে তবুও কিংকরের ফোন এলো না! ইনজাম ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে ৬:৩৭ বাজে।  ইনজাম মনে মনে ভাবল এমনতো বিগত ২ বছরে হয়নি।  তাহলে কিংকরের কি কোনো সমস্যা হলো? ভাবতে ভাবতে কখন যে ফোন চলে গেছে কিংকরের কাছে তা ইনজাম নিজেও জানে না।  নাহ, কিংকর তো ফোন ধরছে না! এতক্ষণে ঘোর অন্ধকারে ঢেকে গেছে পুরো শহর।  ইনজাম অফিসের লাইট জ্বালাতে গিয়ে লক্ষ্য করলো আজ রোড লাইট জ্বলেনি।  এরিমধ্যে ফোনে ভাইব্রেট হচ্ছে।  

ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে এলো মিসেস ইনজামের কণ্ঠস্বর।  ইনজাম – হ্যাঁ রাখি বলো।  রাখি (কান্না জড়িত কণ্ঠে) – জানি না কি হয়েছে।  আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।  মহল্লার সব লোক নিজেরা মারামারি করছে।  একে অন্যকে কামড়িয়ে রক্ত বের করে দিচ্ছে।  ফোন কলটি কেটে গেলো।  ইনজাম ফিরতি কল দিতেই সুইচ অফ বার্তা আসতে লাগলো।  ইনজাম মাকে ফোন দিলো, কিন্তু মায়ের ফোনও সুইচ অফ।  ইনজাম দ্রুত পুলিশকে ফোন দিলো, কিন্তু পুলিশের ফোন এঙ্গেজড হয়ে আছে।  

বিপদের সময় লিফট কাজ করে না এটি এক অপ্রকাশিত সত্য।  লিফটের সুইচ দুই তিনবার চেপে কোন কাজ না হওয়ায় সিঁড়ি বেয়েই নিচেয় নামতে উদ্যত হলো ইনজাম।  উপর থেকে দোতালা নামতেই নিচেয় লক্ষ্য করলো চিৎকার চেঁচামিচি।  কয়েকজন দৌড়ে উপরে উঠছে, আর কয়েকজন গোঙাচ্ছে আর ওদের ধাওয়া করছে।  ইনজাম ক্ষিপ্রতার সাথে ইমারজেন্সি এক্সিটের কোণে নিজেকে লুকিয়ে ফেলল।  ইমারজেন্সি এক্সিট দিয়ে ইনজাম নেমে এদিক ওদিক তাকিয়ে হাঁটা শুরু করলো।  কিছু পথ যেতেই ডাস্টবিনের কোনা থেকে চাপা স্বরে কিংকর বলল – কিরে হারামজাদা কোথায় যাচ্ছিস? ইনজাম তড়িঘড়ি করে নিজেকে ডাস্টবিনের কোনায় লুকিয়ে ফেলল।  

ইনজাম – আচ্ছা এসব হচ্ছে কি? আমি তো কিছুই বুঝতেছি না।  কিংকর – আমিও না।  আমি সন্ধ্যার একটু আগে আসতেছিলাম অফিসের দিকে, দেখি নাজিফা মেইন গেটের সামনে দাঁড়ানো।  হটাত করেই কোথাথেকে কিছু পুরুষ ও মহিলা এসে নাজিফাকে কামড়ে ধরলো।  ব্যাস, পুরো এলাকায় বিশৃঙ্খলা শুরু হয়ে গেলো।  আমি উপায় না দেখে এই ডাস্টবিনের কোনায় লুকিয়ে পড়ি।  ইনজাম – জলদী নেটে দেখ কি হলো! কিংকর (নরম স্বরে) – নেট লাইন বিচ্ছিন্ন।  ইনজাম – প্রশাসন কি করছে? কথা শেষ হতে না হতেই নিরাবতা ভেঙে পুলিশের এক গাড়ি কড়া ব্রেক করে দাড়ালো মেইন রোডে।  খই ফোটার মতো গুলির আওয়াজ হলো কিছু সময়।  ব্যাস আবার সব ঠাণ্ডা।  ইনজাম আর কিংকর ডাস্টবিনে লুকিয়ে সবই দেখলো, এবার তারা দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে ভয়ে ঢোক গিলে চুপসে বসে রইলো।  


২০ দিন আগের কথা ---

ইনজাম বাসা থেকে অফিসের উদ্দশ্যে বের হচ্ছে।  এমন সময় মা ডেকে বললেন – হ্যারে বাবা, আমার জন্যে ফেরার পথে চিকেন ফ্রাই আনবি।  ইনজাম মাকে জড়িয়ে ধরে বলল – আচ্ছা মা তুমি ছাড়া কে আছে আমার বলো।  পাশ থেকে রাখি টিফিন গোছাতে গোছাতে কেশে উঠলো।  ইনজাম এবার রাখির কাছ থেকে টিফিন নিতে নিতে ফিস ফিস করে বলল – পৃথিবী যদি কোনদিন লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়, তবুও আমি ফিরে আসবো তোমারা জন্যে।  এরমধ্যে মা জোরে সাউন্ড দিয়ে সংবাদ শুনতে শুরু করলো।  স্বামীস্ত্রীর কথার মধ্যে মা অস্বাভাবিক কিছু একটা করবে এটাই স্বাভাবিক।  তো, ইনজাম বেরিয়ে যাচ্ছে এমন সময় নিউজের দিকে কান গেল – আমি ডঃ টি গর্বের সাথে বলছি, আর মৃত্যু নয়।  আমরা মৃত্যুকে জয় করতে পেরেছি।  একবিংশ শতাব্দীর ক্রায়োনিক্স প্রযুক্তই এনে দিয়েছে এই সাফল্য।  ইনজাম গাড়ির লক খুলে মনে মনে বলল – পাগোলের প্রলাপ।  


বর্তমানে ---

কিংকর ঝিমুচ্ছে ইনজামের পাশে বসে।  ইনজাম বলল – আমাকে যেতে হবে।  কিংকর চোখ বড় করে বলল – কোথায়? কিভাবে? ইনজাম – কিভাবে জানি না, বাসায় আমার মা আছে, ভালোবাসার স্ত্রী আছে।  ওদের ছেড়ে আমি এখানে বসে থাকতে পারি না।  কিংকর – দেখ প্রাক্টিকাল হ, ওরা এখনো বেঁচে আছে কিনা কে জানে? হটাত কারও পায়ের শব্দ ভেসে এলো ডাস্টবিনের ওপাশ থেকে।  ইনজাম আর কিংকর দম ধরে নিঃশ্বাস আটকে রাখলো।  নাজিফা – স্যার, আছেন স্যার? ইনজাম – আরে এ তো নাজিফা! কিংকর – আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, আমি নিজের চোখে ওকে মরতে দেখেছি! নাজিফা (কান্না জড়িত কণ্ঠে) – স্যার আমার পিপাশা লেগেছে পানি খাবো।  ইনজাম উঠতে যাবে, কিংকর বাধা দিয়ে বলল – দেখ দোস্ত বের হসনে।  নাজিফা – স্যার আমি আপনাদের সামনে বলে খিল খিল করে হেসে উঠল।  নাজিফার ঠোট ছিড়ে রক্ত পড়ছে, এক চোখ কে যেন খুঁচে নিয়েছে, এক পা মুড়ে দিয়েছে, এক বীভৎস রূপ।  কিংকর চিৎকার দিয়ে বলল – পালা ইনজাম।    

ইনজাম আর কিংকর দৌড়াতে দৌড়াতে এক ল্যাবরেটরিতে ঢুকল।  এখান থেকে প্রয়োজনীয় কিছু ওষুধ নিয়ে আবার ছুটতে শুরু করবে এমন সময় গ্লাস ফাটা টিভির দিকে নজর গেল দুজনের।  একটি ম্যাসেজ বার বার রিপ্লে হচ্ছে – প্রিয় শহরবাসি আমি ডঃ টি আপনাদের বলছি দ্রুত শহর থেকে অন্যত্র পালিয়ে যান।  মৃতদের জীবিত করে জম্বি বানিয়েছি, কিন্তু নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলাম না।  আমি সরকারের কাছে দ্রুত এই এলাকায় পারমাণবিক আক্রমণের দাবী জানাচ্ছি।  নচেৎ খুব শিগ্রিই পুরো দেশ আর এভাবে পুরো পৃথিবী ওদের দখলে চলে যাবে।  ইনজাম আর কিংকর আবার ছুটতে শুরু করলো।  

হটাত কিংকর থেমে গেল।  ইনজাম (হাপাতে হাপাতে) – কি হলো? কিংকর – দেখ পিস্তল! ইনজাম –ওসব দিয়ে কি করবো? কিংকর – জানি না, কিন্তু আমি নিব।  কি জানি সামনে কি অপেক্ষা করছে? ইনজাম আর কিংকর আবার ছুটতে আরম্ভ করলো।  

ইনজাম বাসার গেটে নক করতেই দারোয়ান বলল – কে? ইনজাম – আমি, জলদী খোল।  গেট খুলেই দারোয়ান ঝাঁপিয়ে পড়লো ইনজামের উপর।  কিংকর বিকট শব্দে আস্ত বুলেট বসিয়ে দিলো দারোয়ানের পিঠে।  ইনজাম অবাক হয়ে বলল – এরা তাইলে ছলনা করাও শিখে গেছে! ইনজাম দারোয়ানের লাঠি হাতে শক্ত করে ধরে পা টিপে এগিয়ে চলল ঘরের দিকে, সেই সাথে পিস্তল হাতে আগাতে থাকলো কিংকর।  

ঘরে ঢুকে ইনজাম চিৎকার করলো – মা, মা, রাখি।  কোনো সাড়া মিলল না।  ইনজাম খুঁজতে শুরু করলো এঘর ওঘর আর চিৎকার করে ডাকতে থাকলো।  এরমধ্যে পেছন থেকে কিংকর ছুটে এসে ইনজামকে টেনে বলল – পালা দোস্ত, দেখ গেট থেকে কারা ঢুকছে! ইনজাম দেখে দলে দলে জম্বি ওদের বাড়ির মধ্যে আসছে।  সেই জম্বির মিছিলে ইনজামের মা ও সামিল হয়েছে।  ইনজাম স্তব্দ হয়ে গেলো।  এদিকে ইনজামকে ঠেলে চলেছে কিংকর, ওরা দৌড়াবে এমন সময় পিছের অন্ধকার থেকে রাখি ডাক দিলো ইনজামকে।  রাখি (কান্না জড়িত কণ্ঠে) – আমাকে নিয়ে যাবা না? ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।  কিংকর – চল ইনজাম, সময় নষ্ট করিস না, ওরা ছলনা করে! ইনজাম দাঁড়িয়ে আছে পিছু ফিরে আর চোখ দিয়ে অশ্রু পড়ছে অঝরে, এমনসময় রাখি অন্ধকার থেকে হাত বাড়িয়ে দিলো ইনজামের দিকে।

এরকম আরো সায়েন্স ফিকশন গল্প পড়তে Science Fiction লিংকে ক্লিক করুন।


No comments:

Post a Comment