Latest

Continue reading this blog to discover yourself

Monday, July 11, 2022

SOMOYER FATOL | Short Stories

সময়ের ফাটল

খালিদ বিন মাসুদ

(এই গল্পটি খুলনা কালচারাল সেন্টার এর ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।)

এক.

Somoyer Fatol
দরজাটা টেনে লাগিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে পড়লো অথি। পড়ন্ত বিকেলের লাল আকাশে দূরে চেয়ে কি যেন খুঁজছে তার চোখ। কিছু সময় ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে আপন মনেই বলে উঠল - “এমন কেন হবে?” অথি আবার হারিয়ে গেল ঐ আকাশে। এদিকে হু হু করে বইছে উত্তরে বাতাস। ঠাণ্ডার প্রকোপে অথির সম্বতি ফিরে এলো। সে এবার বারান্দা থেকে নেমে মাটির পথ ধরে এগুতে থাকলো। হাটতে হাটতে সে নিজেকে আপন মনে প্রশ্ন করলো - “প্রকৃতি যদি আমাদের সাথে এমন ছলনা করে, তবে আমরাও কি পারি না প্রকৃতির সাথে ছলনা করতে?” এমন সময় অথির সেলফোনে ভাইব্রেড হোলো। অথি - “হ্যালো। কে?” ওপাশ থেকে ছেলে কণ্ঠ - “কই তুই?” অথি - “ও হৃদয়। কেন কি দরকার?” হৃদয় (উত্তেজিত কণ্ঠে) - “আমরা সবাই ক্যাম্পাসে আছি। চলে আয়। একটা কিছু করতেই হবে!” অথি কলটি কেটে দিয়ে কাঠের গেট থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এসে দাঁড়ালো। পাশেই রিক্সা ছিল। রিক্সায় উঠতে গিয়ে সে আবার বাড়িটির দিকে ফিরে চাইল। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিক্সাওয়ালাকে চালাতে বলল। 

ভার্সিটি ক্যাম্পাসে সন্ধ্যায় সবাই চা আর টা এর আড্ডায় ব্যাস্ত। এতো লোকের মাঝে চারটি ছেলেমেয়ে নিশ্চুপ বসে আছে তাতে কারোরি মাথাব্যাথা নেই। বেশকিছু সময় এভাবে কাটিয়ে দেবার পর নিস্তব্দতা ভেঙে অনিক বলে উঠল - “এভাবে বসে থাকলে কি হবে? নিতু তোরা কথা বলছিস না কেন?” নিতু (কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে) - “আমি, আমি আর ভাবতে পারছি না। আমি জানি না কি হবে?” শান্ত - “দেখ যা হবার হবে। তাই বলে আমরা কি এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবো?” অথি - “হৃদয় টা কই গেল? আমাকে ফোনে আসতে বলে নিজেই উধাও! আজব!” নিতু - “অইতো হৃদয় তোর পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।” অথি - “হৃদয় সামনে আয়। এভাবে লুকিয়ে থাকিস না।” হৃদয় সবার মাঝে এসে বসলো। একটু থেমে বলতে শুরু করলো - “দেখ। আমি ফিগার আউট করে ফেলেছি। দেখ, এই ভার্সিটি থেকেই ঘটনার শুরু হয়েছিলো।” অনিক - “তোহ?” হৃদয় - “আমরা যদি ফিরে যেতে পারি, মানে ...” শান্ত কথাটিকে ব্যাঙ্গ করলো। হৃদয় বিষয়টি ভ্রুক্ষেপ না করে আবার বলতে শুরু করলো - “আমরা যদি ফিরে যেয়ে ঘটনাটি ঘটতে না দেই” এবার হৃদয়ের কণ্ঠ ভিজে উঠল (কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে) - “আমাদের স্যার আমাদের ছেড়ে যাবে না। তোরা তো বুঝতে পারছিস আমি কি বলছি?” 

সবাই এতো সময় হ্যাঁ করে হৃদয়ের কথা শুনছিল। নিরবতা ভেঙে অথি বলল - “কিভাবে যাব?” হৃদয় - “চল তোরা আমার সাথে। আমি দেখাব কিভাবে যেতে হয়।” 

দুই.

শান্ত ফিস ফিস করে বলল - “দেখ হৃদয়! একে তো স্যারের বাড়ি চুরি করে ঢুকেছিস। এরপর আবার তার ল্যাবরেটরির সবকিছু এলোমেলো করে ফেলছিস।” হৃদয় - “চুপ। কথা না বলে ভি.আর বক্স খোজ।” সবাই টিম টিমে আলোয় টর্চ জেলে খুব সাবধানে ভি.আর বক্স খোজ করতে লাগলো। অথি কিছু সময় পর চাপা কণ্ঠে বলে উঠল - “এই তো! ভি.আর বক্স এখানে!” সবাই টর্চ নিয়ে জড় হোলো ভি.আর বক্সের সামনে। হৃদয় বাদে সবাই একসাথে বলে উঠল - “এখন?” হৃদয় - “দেখ। তোরা তো জানিস আমাদের প্রযুক্তির স্যার এক জিনিয়াস।” নিতু - “তাতে কোনও সন্দেহ নেই।” হৃদয় - “হ্যাঁ। আর একারনেই তার এই ভি.আর বক্স এর মাধ্যমে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নয় বরং সত্যি সত্যি ভবিষ্যৎ বা অতীতের পরিবেশে যাওয়া যায়!” অনিক - “বলছিস কি?!” হৃদয় - “হ্যাঁ সত্যি! এই যন্ত্র দিয়ে সময়ের ক্র্যাক খুঁজে পাওয়া যায়।” অথি - “সময়ের ফাটলে ঢুকলেই তো নিজের সবকিছু স্থির। আর সেখান থেকে যেদিকে ইচ্ছে সেদিকে যাওয়া যায়! কিন্তু এটা তো থিয়োরি।” হৃদয় - “হ্যাঁ এটা স্যারের এক গোপন আবিষ্কার। তবে...” অথি - “তবে কি?” হৃদয় - “তবে এটা পরীক্ষিত নয়।” সবাই বিস্ময় চোখে তাকিয়ে পড়লো হৃদয়ের দিকে। 

হৃদয় - “দেখ। আমাদের এটা করতেই হবে। তোরা কেন বুঝছিস না, এটাই শেষ সুযোগ।” শান্ত - “আর এটা যদি কেবলই থিয়োরি হয়?” হৃদয় - “আমাদের এতটুকু শান্তনা থাকবে, আমরা চেষ্টা করেছি।” অনিক - “কিন্তু আমাদের প্রথমে যেতে হবে ভবিষ্যতে।” নিতু - “কেন?” অথি - “কারণ আমরা আসলে জানিই না স্যারের আকস্মিক মারা যাওয়ার কারণ কি?” হৃদয় - “এক্সাক্টলি। আর আমরা ভবিষ্যতে গিয়ে স্যারের জীবনী থেকে তার পাস্ট জানবো, এরপর বর্তমানে ফিরে এসে আবার পাস্টে যাবো।” শান্ত - “কিন্তু এই টাইম ট্রাভেল করবে টা কে?” হৃদয় - “আমার তো এটাকে এখানে অপারেট করতে হবে। তবে কে হবে টাইম ট্রাভেলার?” 

অথি (দৃঢ়তার সাথে) - “আমি।” সবাই তাকিয়ে পড়লো অথির দিকে। অথি সবার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। সবাই অজানা এক আতংকে কয়েকবার ঢোঁক গিলল।  


তিন.

রাত ১১ টা। হৃদয়দের গ্রুপ লুকিয়ে লাইব্রেরীতে ঢুকল। কেননা ওদের ধারনা ভবিষ্যতে লাইব্রেরীতেই তাদের স্যারের জীবনী স্থান পাবে। ওরা অথিকে লাইব্রেরিয়ান এর স্থানে বসিয়ে ভি.আর বক্স সেট করলো। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে অথি শুরু করলো টাইম ট্রাভেল। তিন... দুই... এক... অথির সামনে দিয়ে দ্রুত সব প্রেক্ষাপট পরিবর্তিত হতে থাকলো। প্রথমে লোকজনের দ্রুত চলাফেরা, এরপর দিন রাতের দ্রুত পরিবর্তন, ধিরে ধিরে মাস... বছর... 

(ভবিষ্যৎ ১২ বছর পর) অথি দেখল লাইব্রেরিয়ান তাদের প্রযুক্তি শিক্ষকের জীবনী পড়ছে। অথিও লাইব্রেরিয়ানের সাথে তা শুরু করে দিল। একে একে সবকটি পৃষ্ঠা পড়ে অথি আবার বর্তমানে ফিরে আসতে শুরু করলো। বর্তমানে ফিরে এসে অথি চিৎকার দিয়ে জোরে এক শ্বাস নিলো। নিতু দ্রুত কম্বল দিয়ে অথিকে পেচিয়ে ধরল। হৃদয় - “কি দেখলি?” অথি (একটু হাঁপিয়ে) - “বলছি। পানি দে...” শান্ত দ্রুত একগ্লাস পানি নিয়ে এলো। অথি বলতে শুরু করলো - “স্যার মারা যাই নি। স্যার গোমায় আছে। সে ১০ বছর গোমায় থাকার পর মারা যায়।” অনিক - “তার মানে স্যার এখনো জিবিত?” হৃদয় - “হ্যাঁ। কিন্তু হঠাৎ গোমায় কেন?” নিতু - “আমার ধারনা হচ্ছে স্যার কোনও এক টাইম ট্রাভেল টাইমলাইনে আটকে গেছেন।” হৃদয় - “আমাদের হাতে সময় কম। আমাদের দুইদিন আগে যেতে হবে। দেখতে হবে স্যার ঠিক কি করছিল? চল সবাই স্যারের ল্যাবে যাই।”

রাত 2.35 মিনিট। স্যারের ল্যাবে অথি আবার টাইম ট্রাভেল শুরু করলো। ট্রাভেলিং এর সময় এবার অথি বিচিত্র আচরণ করতে থাকলো। কখনও ভয়, কখনও কিছু বলতে চাওয়া, আবার কখনও কেঁদে ওঠা। অথি ফিরে এলো বর্তমানে। বর্তমানে ফিরে অথি জানায় এক হৃদয়বিদারক কাহিনী। অথি বলল - “সব কিছু ভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে শুরু হয় নি! স্যারের প্রপোজ প্রত্যাক্ষান করে এক মেয়ে। তাকে রাজি করাতে এক টাইম ট্রাভেলার বানাতে চায় স্যার। এজন্য আজ সে এক প্রযুক্তি বিজ্ঞানী। তাকে রাজি করাতেই বার বার অতীতে যায় স্যার। কিন্তু কোনও ভাবেই সে কিছু করতে পারি নি। আর শেষবার সে আটকে যায় সময়ের ফাটলে।” এক ঢোক পানি খেয়ে অথি আবার বলতে শুরু করে - “এই যন্ত্রের মাধ্যমে কেবল অতীত বা ভবিষ্যতের বিভিন্ন চিত্র দেখা যায়। যদি কিছু পরিবর্তন করতে চাওয়া হয় তবে সে সময়ের ফাটলে আটকে যাবে। স্যার হয়তো শেষবার এমনই এক ভয়ংকর সিদ্ধান্তে আজ গোমায় গিয়েছেন।” শান্ত - “তার মানে নিউটনের তৃতীয় সুত্র - প্রত্যেক ক্রিয়ারি সমান ও বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া রয়েছে!” হৃদয় - “ঠিকতাই। যদি আমরা প্রকৃতির নিয়মের বিপরীত করতে চাই তবে এর প্রতিদানও আমাদের দিতে হবে।”

সবার চোখে মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ ফুটে উঠল। কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না কেউ। এমন সময় বাড়িটা বৈদ্যতিক সংযোগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। 


চার.

শীতের এক পড়ন্ত বিকাল। একটি ছেলে গোলাপ নিয়ে মেঠো পথে দাঁড়িয়ে আছে কারও অপেক্ষায়। অপেক্ষার মানুষটি ছেলেটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় এক দমকা বাতাসে উড়ে গেলো তার সব বইখাতা। সেই সাথে পড়ে গিয়েছে গোলাপটিও। মেয়েটি বইখাতা গোছানোর সাথে গোলাপটিও তুলল। একটু হেসে ছেলেটির দিকে গোলাপটি এগিয়ে দিয়ে বলল - “এটি আপনার, এই নিন।” ছেলিটি - “তোমার কাছেই থাক নাহ।” মেয়েটি আবার হেসে গোলাপটি নিয়ে মেঠো পথ বেয়ে হেটে চলল। 

সোরগোলের শব্দে হৃদয় জেগে ওঠে, তাকিয়ে দেখে সে ফিলোসফি ক্লাসে। হৃদয় বোর্ডের দিকে তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে সবই কি নিছক স্বপ্ন ছিল? এই ফিলোসফি স্যারকে কেন এতো চেনা মনে হয়? হৃদয়ের মাথা যন্ত্রণা করতে শুরু করে। সে ক্লাস থেকে বেরিয়ে এসে গাছের নিচেয় দাঁড়িয়ে থাকে। এমন সময় ফিলোসফি স্যার হৃদয়ের পাশে এসে দাড়ায়। স্যার বলতে শুরু করে - “প্রেমে পড়েছ বাবা?” একটু থেমে রশিকতার ছলে “কেউ ফুলটুল দিলে নিয়ে নিও কিন্তু। ” হৃদয় আনমনে বলে - “কি ফুল স্যার?” স্যার - “কেন গোলাপ!” স্যারের কথা শুনে হৃদয়ের খটকা লাগে। হৃদয় কিছু বলতে যাওয়ার আগেই স্যার হাটতে শুরু করে। হৃদয়ও পিছু ফিরে হাটতে শুরু করে। হাটতে হাটতে স্যার বলে - “অথি, অনিক, নিতু, শান্ত এদের কি চেন? এরা কি তোমার বন্ধু?” আমতা আমতা করে আবার বলে - “আমার কেন জানি বারবার গুলিয়ে যায়!” 

হৃদয় থমকে দাড়ায়। এক ঝটকায় পিছু ফিরে দেখে, স্যার হাঁটছে আর গুণ গুণ করে গাইছে - “যেও না কেউ সময়ের পিছুটানে…, আবার হবে দেখা চলতে চলতে...”

এরকম আরো সায়েন্স ফিকশন গল্প পড়তে Science Fiction লিংকে ক্লিক করুন।


No comments:

Post a Comment